by our guest blogger Sarmistha Chakladar
“দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া…
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া…”
শুরুতেই এই শব্দগুলো ব্যবহার করলাম কারণ, আমরা যারা একটু ঘুরতে-বেড়াতে ভালবাসি..
অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানা জায়গাতেই যেতে পছন্দ করি। কিন্ত তার বাইরেও এমন অনেক জায়গা আছে যা হয়তো বহুল প্রচলিত নয়, কিন্ত সেখানে গেলেই এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে মন ভরে যায়।এমনই এক জায়গায় সম্প্রতি ঘুরে এলাম….বীরভূম জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম “মুলুক”….ওখানে ভারত সেবাশ্রম সংঘের একটি শাখা আছে…আশ্রমও বলা যেতে পারে…সেখানেই কাটিয়ে এলাম দুদিন-একরাত।
আমরা বারো জন মিলে তিনটে গাড়িতে চড়ে রওনা হলাম শনিবার সকালে। ঘড়িতে তখন সকাল 7.30। দু-পাশের বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট দেখতে দেখতেই এসে গেল ইলামবাজার। ওখানে টোল ট্যাক্স দিয়ে আমরা ধরলাম বোলপুরের রাস্তা।
এযাত্রায় শান্তিনিকেতনের হাতছানিকে উপেক্ষা করে আমরা এগিয়ে চললাম বোলপুর স্টেশনের দিকে। স্টেশন ছাড়িয়ে খানিকটা এগোতে পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে…….।।
দুর্গাপুর থেকে মেরেকেটে ঘন্টা দুয়েকের রাস্তা।
গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে তাকাতেই মন আর চোখ দুই-ই জুড়িয়ে গেল। আদিগন্ত জুড়ে সবুজ ঘাসের লন। আর তাঁর চারদিক ঘিরে আছে দুঃস্থ শিশুদের ছাত্রাবাস, আমাদের মতো পর্যটকদের থাকার জন্য তিনতলা ধর্মশালা, আই.টি. আই কলেজ, অফিস ঘর আর মন্দির। ছোট্ট একটি বাগান ও আছে।
সব মিলিয়ে এক মনোরম পরিবেশ।
আমাদের ছটি পরিবারের থাকার জন্য আলাদা, আলাদা ঘর দেওয়া হলো দোতলায়।ঘর বলাটা ভুল হলো……দুটি রুম, সঙ্গে কমোড ও গিজার সহ বেশ প্রশস্ত বাথরুম। বেডরুমে এসি, আলমারি, আলনা এবং তিনজনের শোবার মতো বেশ বড় একটি বিছানা। আর সবথেকে ভাল লাগল পিছনের ব্যালকনি টি।
ওখানে দাঁড়ালে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়।
লাগেজ রেখে আমরা ডাইনিং রুমে গেলাম সকালের জলখাবার খেতে। এক খন্ড চকোলেট কেক, মুড়ি, তরকারি আর শশা সহযোগে খাওয়া হলো। এরপর কিছুক্ষণ আড্ডার পর বেলা একটা নাগাদ আবার ডাইনিং হলে গেলাম দুপুরের খাবার খেতে। হল ঘরটি বেশ বড়, চেয়ার-টেবিল দ্বারা সুসজ্জিত। এখানে পুরোপুরিই আমিষ-বর্জিত খাবার। তবে রান্নার স্বাদ যথেষ্টই ভাল। ডাল,ভাত 2/3 রকম তরকারি আর শেষ পাতে টক-মিষ্টি দই। রাতে রুটি খেতে হলে বিকেলের দিকে কুপন লিখিতে আনতে হয়।
শেষ দুপুরের দিকে গেলাম এখানকার বিশালাকার গোশালা দেখতে। ওখানে প্রায় 200/250 গোরুর দুধ মেশিনের সাহায্যে দোয়াতে দেখলাম। সত্যি বলতে আদ্যন্ত শহুরে মানুষ হওয়ার সুবাদে এমন অভিজ্ঞতা আমার আগে কখনও হয়নি……
আলাপ হলো এখানকার মহারাজের সাথে…..বেশ ভালো লাগল। এরপর আরও খানিকক্ষণ ঘুরে-টুরে সন্ধ্যা নাগাদ ফিরে আবারও এসে বসলাম আমাদের আড্ডাস্থলে।বার কয়েক চা সহযোগে চললো গল্প, মজা, খুনসুটি……….চা-য়ের সরঞ্জাম অবশ্য আমাদের সঙ্গেই ছিল।রাতে আবারও একই ভাবে হই হল্লা করে খাওয়া-দাওয়া সারা হলো।
পরদিন সকাল সকাল স্নান সেরে তৈরী হয়ে মন্দিরে গেলাম। এখানে মন্দিরের পূজার্চনা, গান, উপাসনা সবকিছুই করে এখানকার ছাত্রাবাসের আবাসিক শিশুরা এবং সবটাই করে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ভাবে।
আমাদের দুদিনের ট্যুর প্রায় শেষলগ্নে এসে গেছে।
এরপর দুপুরের খাবার……আর তারপরেই মুলুক কে বিদায় জানিয়ে পুনরায় ঘরের পথে ফেরার পালা……
মুলুক ছেড়ে যাওয়ার পথে রবিবারের শেষ দুপুরে প্রচুর মানুষ আর গাড়ির ভিড় সামলে একঝলক উঁকি দিলাম সোনাঝুরির হাটে…….
হাটে নানারকম পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা….ক্রেতার ভিড়ও মন্দ নয়। উপরন্তু আদিবাসী মেয়েদের নৃত্য দেখারও সুযোগ হল। আরও কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আর যৎসামান্য কেনাকাটা সেরে আবার ও আমাদের যাত্রা শুরু হলো।
পথে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে একটু থামা। সন্ধ্যার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম যে যার বাড়িতে।
ফিরলাম …..তবে একদম খালি হাতে নয়……. বুক ভর্তি নির্মল বাতাস আর প্রাণভরা নির্ভেজাল আনন্দ নিয়ে।।।
আর নিয়ে এসেছি মোবাইল ভর্তি অনেক ছবি এবং অজস্র সুখস্মৃতি…..
Leave a Reply